গত ৫ জানুয়ারির ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে পুলিশ এখনোও চুপ। প্রশাসনেরও কোনো হেলদোল নেই।
গত ৫ জানুয়ারি বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা ওই মহিলা গলস্টোন অপারেশনের জন্য ইএম বাইপাসের ধারে কাদাপাড়ায় অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর অভিযোগ, অপারেশন চলাকালীন শ্লীলতাহানী করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় ওই মহিলার গলব্লাডারের অস্ত্রোপচার হয়। তার পরেই ওই মারাত্মক ঘটনা।
অভিযোগকারী রোগী যে অভিযোগ করেছেন সেটি হল, ওটির দিন যখন তাঁর অ্যানাস্থেসিয়ার ঘোর ধীরে ধীরে কাটছে তখন তিনি টের পান তাঁর পাশে ২ জন পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের কন্ঠ তিনি শুনতে পান। চোখ খোলার মতো বা শরীর নড়ানোর মতো পরিস্থিতিতে তিনি ছিলেন না। কিন্তু বুঝতে পারেন তাঁর বুকে খুব জোরে চাপ দেওয়া হচ্ছে। সেই যন্ত্রণা এতটাই যে তার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। পাশাপাশি তাঁর গোপনাঙ্গেও হাত দেওয়া হয়।
‘অপারেশন চলাকালীন আমার হালকা জ্ঞান ফিরে আসে। বুঝতে পারি, আমার বুকে কেউ জোরে আঘাত করে। আরও বুঝতে পারি, কেউ আমার যৌনাঙ্গে হাত দিচ্ছে। আমার জ্ঞান ফিরে আসছে বুঝতে পেরেই তারা ছেড়ে দেয়।’ মহিলা জানিয়েছেন, অপারেশনের পরে দেখেন যে তাঁর শরীরে একাধিক কালসিটে দাগ রয়েছে। এমনকী বুকে একটি ছিদ্র করা হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘গলব্লাডার স্টোন অপারেশনের জন্য কেন বুকে ফুটো করা হবে?’
৬ জানুয়ারি তিনি একজন নার্সকে সঙ্গে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে নিজের দেহ পরীক্ষা করে দেখেন শরীরে বেশকিছু কালশিটে দাগ রয়েছে। এরপরই একজন মহিলা এক চিকিত্সককে ডাকেন। তিনি না আসলেও ওই মহিলার যিনি চিকিত্সক তিনি এসে ওই কালশিটে দাগ দেখে চমকে ওঠে। হাসপাতালের ম্যানেজমেন্টের লোকজনও আসেন। তাঁরা এসে আশ্বাস দেন ১৫ মিনিটের মধ্যে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
অভিযোগকারী মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। এনিয়ে ফুলবাগান থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছে রোগীর পরিবার। বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় ওই মহিলার গলব্লাডারের অস্ত্রোপচার হয়। তার পরেই ওই মারাত্মক ঘটনা।
অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে এক মহিলাকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠল অ্যাপোলো হাসপাতালের কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর ওই মহিলা পুলিশে অভিযোগ জানান। অভিযোগ জানানোর পর এক সপ্তাহ কেটে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি বলে দাবি করেছেন মহিলা। তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালের বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও ইতিমধ্যেই ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারিণী। কিন্তু সেই রিপোর্টেও গরমিল রয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা।
গত ৫ জানুয়ারি এই ঘটনা হয়। মহিলা ৭ জানুয়ারি ফুলবাগান থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে ডাক্তারি পরীক্ষা জন্য আসতে বলা হয়। হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডাক্তারি পরীক্ষার পর চিকিৎসক আমায় বলেন কিছুক্ষণের মধ্যে আমায় রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু পরে তদন্তদাকারী অফিসার এসে জানান যে সোমবার সকালে এসে রিপোর্ট নিতে হবে।’ সেই রিপোর্টে জানানো হয়, অপারেশন আগে থেকে তাঁর শরীরে ওই আঘাতগুলি ছিল।
তিনি আরও বলেন, অপারেশনের আগে থেকেই যদি শরীরে আঘাত থাকলে অপারেশনের সময় চিকিৎকরা কেন তা জানালেন না? গ্ললব্লাডার স্টোন অপারেশনের জন্য বুকের কাছেই বা কেন ফুটো করা হল?
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে অভিযোগ করা হলে অ্যাপোলোর পক্ষ থেকে তাঁকে কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থণা করা হয়। কিন্তু তারপর আর হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। তাঁর প্রশ্ন যদি অপারেশন কক্ষে কিছু না ঘটে থাকে, তবে কেন তাঁর কাছে এসে ক্ষমা চাওয়া হল? পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের কেন চিহ্নিত করছে না?
পুরো ঘটনাটি মহিলা ইমেল করে সিপি এবং জয়েন্ট সিপিকে জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের দিকে থেকেও মহিলার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন মহিলা। তাঁর অভিযোগ, ‘পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার করছে অ্যাপালো হাসপাতাল।’