সুদীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে আছে শুধুমাত্র কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের কারণে, যে ধারা আজও অব্যাহত।
২০১১ সালে বাম অপশাসনকে পরাস্ত করে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে সরকার গঠন করে। মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়। তারপর কী হল? তৃণমূল সরকার প্রতিশ্রুতি পালনে তাদের ব্যর্থতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন প্রতিষ্ঠা করল বাংলার বুকে। বাংলার মানুষ তীব্রভাবে প্রবঞ্চনার শিকার হয়েছে এই সরকারের দ্বারা। শিল্প, শিক্ষা তো বর্তমানে আণুবীক্ষণিক।
বাংলায় বর্তমানে প্রায় প্রতিটি সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, জীবিকাক্ষেত্রে রাজত্ব করছে তৃণমূলের তোলাবাজ বাহিনী। আক্ষরিক অর্থে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে তৃণমূল। স্বৈরাচারের চূড়ান্ততম পরিস্থিতি এটি।
রাজনীতিতে ক্রমাগত অপরাধচেতনা ঢুকছে এবং দুর্নীতিকে রাজনীতির সংজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে রাজনীতি বলতে দুর্নীতিই চোখে পড়ছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির এতটাই অবনমন ঘটেছে।
বর্তমান বাংলার শাসনকালের সমীক্ষা করলে দেখা যাবে, বিরোধী দলের ঠিক কতজনকে হত্যা করে বিরুদ্ধ কণ্ঠকে কীভাবে রোধ করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা করে, সংবিধানসম্মত প্রতিবাদকে অবদমিত করে গণতন্ত্রের ধ্বজা উড়িয়ে রাখা যায় না। সাধারণ মানুষের কথা ভাবা তো দূর অস্ত, সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন বা বলতে চাইছেন তা নিয়ে সরকারের কোনও হেলদোল নেই। সাধারণ মানুষের ভোটে জয়ী হয়ে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বৈরাচারী রাজত্ব শুরু করেছেন।
শাসকদলের প্ৰছন্ন মদতে চলছে বেআইনি অস্ত্র মজুত। বেআইনি অস্ত্র মজুতে ভারতবর্ষে শীর্ষস্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। শাসকদলের প্রত্যক্ষ সংযোগ ছাড়া কখনও সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মদতে রাজ্যেই তৈরি হচ্ছে বোমাসহ নানান বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্র।
ছত্রধর মাহাতোদের মতো দাগী মাওবাদীদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস সরকার মাওবাদকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে।
সন্ত্রাসের আখড়া তৈরি হচ্ছে বাংলার বুকে। এবং পর পর ঘটে চলা খাগড়াগড় বা নৈহাটি বা ব্যারাকপুর বিস্ফোরণকাণ্ডে শাসক দলের সন্ত্রাস এবং জঙ্গি কার্যকলাপের রমরমা সামনে চলে এসেছে। শাসকদলের প্রত্যক্ষ সংযোগ ছাড়া কখনও একটা রাজ্যের মধ্যে এভাবে সন্ত্রাস চলতে পারে না।
সাম্প্রতিক অতীতে যখন মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে সাতজন আল-কায়দা জঙ্গি ধরা পড়ে তখন তা পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিকার্যকলাপ বৃদ্ধি ও তাতে শাসক দলের প্রচ্ছন্ন মদত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সুতরাং, এ কথাও প্রমাণিত যে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধার্থে তৃণমূল সরকার সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় ও ব্যবহার করে চলেছে।
কৃষিপ্রধান বাংলার অন্নদাতা কৃষকদের জীবন নিয়েও রাজনীতি করা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত ফোঁড়েরা চাষিভাইদের সমস্ত মুনাফা লুঠ করে নিচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ যোজনা ও ফসল বিমা যোজনা চালু না করার ফলে রাজ্যে ৭০ লক্ষ গরীব চাষিদের বঞ্চিত করেছে সরকার। তাই তো আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন বদলের বিরোধিতা করছেন।
তৃণমূল সরকার আপাদমস্তক সাম্প্রদায়িক। একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে বেলাগাম হিংসা ছড়ানোতে সাহায্য করছেন। ধূলাগড়, আসানসোল, রাণীগঞ্জ, তেলেনিপাড়া, কালিয়াচক, বাদুড়িয়া প্রভৃতি জায়গায় বিশেষ সম্প্রদায়ের সদস্যরা বেলাগাম হিংসা ছড়িয়েছে। দাঙ্গা-হাঙ্গামায় বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে। অথচ দাঙ্গাবাজদের কোনও শাস্তি হয়নি। কলকাতায় মহরমের জন্য দুর্গাপুজোর বিসর্জন স্থগিত রাখা হয়। হাড়োয়ায় সরস্বতী পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিংবা ভারত মাতার পুজো পর্যন্ত বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূল সরকার সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক রক্ষার উদ্দেশ্য নিয়েই এসব করে তা বলাই বাহুল্য।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একজন মহিলা হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের ওপর হওয়া অত্যাচার ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের নারীসুরক্ষার অবস্থায়। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ নারীসুরক্ষার ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ২০১৮-তে রাজ্যে ১০৬৯-টি ধর্ষণকাণ্ড এবং ৯৪৪ টি ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ২০১৬ থেকে ২০১৮-র মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে কমপক্ষে ৮৪,৩৬৯ জন মহিলার নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের হয়। ২০১৮-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে নারীদের উপর হওয়া অত্যাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করার পরিসংখ্যান হলো মোটে ৫.৩%। ২০১৮-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের ওপর অ্যাসিড আক্রমণের শীর্ষে ছিল।
চাকরি প্রার্থীরা যোগ্য হয়েও পথের ওপর পরে রয়েছে। তাদের সামনে দিয়েই দামী গাড়ি, দামী স্যুট, দামী মোবাইলদামি চশমা পরে অভিষেক ব্যানার্জি নির্লজ্জের মতন যাতায়াত করে। আর শিক্ষা রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। শিক্ষিত যুবক যুবতীদের আজ মমতা চপ ভেজে ব্যাবসা করার কথা বলছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের চরম উদাসীনতার ফলে ডানলপ, হিন্দুস্থান মোটরস, এবং বহু চটকল আজ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য আজ পশ্চিমবঙ্গ চার লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণের দায়ে জর্জরিত।
সম্প্রতি, কাটমানি সংক্রান্ত তৃণমূলের দুর্নীতিগুলিও সর্বসমক্ষে এসে গেছে। তৃণমূলের বহু নেতা-মন্ত্রীদের নামই প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে গেছে এই কাণ্ডে। সরকারি প্রকল্প বা মৌলিক পরিষেবার সুবিধা পেতে হলে সাধারণ মানুষকে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে কাটমানি দিতে হচ্ছে। এভাবেই বাংলার সম্পদ শোষণ করে মুখ্যমন্ত্রীর ও তাঁর দলীয় নেতাদের স্বজনপোষণ চলছে বাংলায়।
এখন মমতা চাইছে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে। তাই নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূল নানা রকম উপঢৌকন দিয়ে বাংলার মানুষের কাছে তাদের নয় বছরের ব্যর্থতা ঢাকার এক সর্বোপরি চেষ্টা করবে, সাধারণ মানুষকে ভয় দেখতে চাইবে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক এবার নিজেদের নরক যাত্রা বন্ধ করবে এই নৃশংস তৃণমূলকে ভোট না দিয়ে।