৪২ লক্ষ টাকার টেন্ডার অনুমোদনের জন্য পঞ্চায়েতের উপ-প্রধানকে বন্দুক ঠেকিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল। ছাড়া পেলেও দু-মাস আতঙ্কে গৃহবন্দি দোলন সাঁতরা। মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের উপপ্রধানের। আতঙ্কে রয়েছেন পঞ্চায়েতের আরও ১২-১৪ জন সদস্য। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য শেখ আব্দুল আজিম সিদ্দিকি।
অন্যদিকে, মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্বতী ঘোষও আতঙ্কিত। তিনি স্পষ্ট জানান, পঞ্চায়েতের কয়েকজন সদস্য প্রভাব খাটিয়ে পঞ্চায়েতের যে কোনও টেন্ডারের ১০ শতাংশ কাটমানি তোলে। আর তাঁকে দেওয়া হয় মাত্র পাঁচ শতাংশ। বাকি টাকা আত্মসাত করে প্রদীপ চট্টরাজ নামে এক পঞ্চায়েত সদস্য ও তাঁর সঙ্গে থাকা সদস্য সহ কয়েকজন। পঞ্চায়েতের এই টেন্ডারের দুর্নীতি সামনে আসতেই ঘটনার তদন্ত করবে বলে জানান তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর। ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজ্য সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন দপ্তর থেকে পাঠানো হয় ৪২ লক্ষ টাকার টেন্ডার নিয়ে পঞ্চায়েতের সদস্যদের বৈঠককে ঘিরে। সরকারের পাঠানো টাকায় কে কাজ পাবে? কী কাজ হবে? অভিযোগ, এসব আগেই ঠিক করে পঞ্চায়েতের এক সদস্য ২৪ জন ঠিকাদারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে তুলে নেয়। আর তাই এই অভিযোগে অধিকাংশ সদস্য বৈঠকে আসতে রাজি হননি। বৈঠকের কোরাম করতে পঞ্চায়েত সদস্য রুনু মাস্টারের নেতৃত্বে পাঁচজন দুষ্কৃতী উপপ্রধান দোলন সাঁতরা মাঝিকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে পঞ্চায়েতে তুলে নিয়ে আসেন বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, এর আগেও পঞ্চায়েতের অঞ্চল সভাপতিকে মহিলা সংক্রান্ত ঘটনায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সময় অলিখিত ভাবে পঞ্চায়েত চালানোর জন্য পাঁচ জনের একটি কমিটি গঠন হয়। কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকেই ব্যাপকভাবে পঞ্চায়েতের টেন্ডার সহ বিভিন্ন কাজে শুরু হয় দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ। ১৯ সদস্যের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েত গঠন হলেও পঞ্চায়েত পরিচালনায় সদস্য প্রদীপ চট্টরাজের কথাই শেষ কথা বলে অভিযোগ উপ প্রধানের। অপরদিকে, প্রধান পার্বতী ঘোষের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের কোনও কাজ সম্পর্কে তাঁকে জানানো হয় না। সদস্য প্রদীপ চট্টরাজের নেতৃত্বে হুমকি দিয়ে বিভিন্ন কাজে সই করিয়ে নেওয়া হয়। এমনকী যে কোনও টেন্ডারে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন আদায় করা হয় বলে অভিযোগ প্রধান পার্বতী ঘোষের।
যদিও অভিযুক্ত রুনু মাস্টার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সদস্যরা নিজের ইচ্ছায় পঞ্চায়েতের বৈঠকে গিয়ে সই করেছেন। ১৯ সদস্যের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্বতী ঘোষ কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ। পঞ্চায়েত পরিচালনায় প্রদীপ চট্টরাজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি সক্রিয়। পঞ্চায়েতের কোন কাজ সম্পর্কে তাঁকে জানানো হয় না। হুমকি দিয়ে বিভিন্ন কাজে সই করিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি যে কোনও টেন্ডারে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন আদায় করা হলেও, আদায়কৃত কমিশন থেকে প্রধান মাত্র ০.০৫ শতাংশ ভাগ পায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভাল্যগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২ সদস্য সমস্যা সমাধানের দ্রুত আবেদন জানিয়ে লিখিতভাবে গোটা ঘটনা দলের জেলা সভাপতিকে জানিয়েছেন।