২০০২ সালের ১২ ডিসেম্বর ব্রেন হ্যামারেজের কারণে তাঁর মৃত্যু হয় সুশান্তের মায়ের। বাথরুমে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিলেন তিনি। তখন সুশান্তের বয়স মাত্র ১৬।দিল্লিতে পড়াশোনা করছেন তিনি। মায়ের মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন না সুশান্ত। এমনকি মায়ের শেষ আবদারটুকু রাখেননি তিনি। মারা যাওয়ার আগের রাতে ফোন করে সুশান্তকে বাড়ি ফিরে আসার অনুরোধ করেছিলেন তাঁর মা,তবে ছেলে সেই আবদার ফিরিয়ে দিয়েছিল। সেই আক্ষেপ আজীবন সুশান্তকে তাড়া করে বেড়িয়েছে।
২০১৬ সালে ডিএন’কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে একথা বলেছিলেন সুশান্ত।তাই সাফল্যের চওড়া হাসির পিছনে মা’কে হারানোর যন্ত্রণাটা যে সবসময় সঙ্গে থাকত তা সবাইকে জানতে দিতেন না সুশান্ত।
২০১৬ সালের এক সাক্ষাত্কারে সুশান্ত জানিয়েছিলেন, ‘আমি জানি আমার পক্ষে (ফোন আসার) পরের দিন সকালেই ওখানে পৌঁছানো কোনদিনই সম্ভব ছিল না। কিন্তু এই ভাবনাটা যে আমি মায়ের কাছে অনেকদিন যাইনি, আমার সঙ্গে রয়ে গিয়েছে। এখনও অনেক কারণ থাকে যেগুলোতে খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আমি খুশি হই না। যেন একটা মরীচিকাকে ধাওয়া করছি।…আমাদের সবারই আসলে একই হাল। আমরা জানি কোনওদিন আমরা সেই স্থায়িত্ব বা মানসিক সুরক্ষা পাব না, আমরা যেটার জন্য ক্ষুধার্ত’।
পড়াশোনায় তুখোড় তো সুশান্ত ছিলেনই,সঙ্গে লেখালেখি করতেও ভীষণ ভালোবাসতেন। কবিতা লেখা ছিল তাঁর প্যাশন। মা’কে নিয়ে লেখা একটি কবিতা ও চিঠি ফ্যানেদের সঙ্গে শেয়ার করে নিয়েছিলেন তারকা। সেই চিঠি এখন ভাইরাল নেটদুনিয়া। ২০১৬ সালের ২৭শে অগস্ট লেখা সেই চিঠিতে সুশান্ত যা লিখেছেন,
‘যতক্ষণ তুমি ছিলে,ততক্ষণ আমি ছিলাম। এখন শুধুই তোমার স্মৃতি জড়িয়ে বেঁচে রয়েছি….’ এখন শুধুই তোমার স্মৃতি জড়িয়ে বেঁচে রয়েছি। ঠিক যেন একটা ছায়াশরীর,মিটমিটে জ্বলছে, এখানে সময় একদম এগোয় না।এটা মনোরম,এটা চিরন্তন….
তোমার মনে আছে? তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে যে আজীবন আমার সঙ্গে থাকবে,আর আমি তোমাকে বলেছিলাম আমিও কথা দিয়েছিলাম সবসময় হাসতে থাকবে,যাই হোক না কেন,মনে হয় আমরা দুজনেই ভুল ছিলাম মা…‘
স্বপ্ন আর বাস্তবের বেড়াজালে আটকে পড়েছিলেন অভিনেতা। অতীত পিছু ডাকছিল, কিন্তু সোনালি ভবিষ্যতের তাড়নাও তো কম ছিল না। এই দুইয়ের মাঝখানেই আটকে পড়েছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। মা’কে নিয়ে লেখা তাঁর শেষ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের বাংলা করলে খানিকটা দাঁড়ায়- ‘আবছা অতীতের বাষ্প যেন চোখের জলে ঝরে পড়েছে..অফুরন্ত স্বপ্ন একটা হাসি খুড়েই চলেছে.. এবং জীবন দ্রুত পরিবর্তনশীল, দুইয়ের মাঝে আমি ঝুলে রয়েছি..মা’।
‘আমরা দুজনেই ভুল ছিলাম মা’,সুশান্তের হাতে লেখা পুরোনো চিঠি