শুধু মাত্র স্পর্শকাতর জেলা নয়। পঞ্চায়েত ভোটে গোটা রাজ্যেই মোতায়েন করতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রেখে এদিন এমনই রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্দেশ বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা করতে কেন্দ্রীয় মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যের আবেদন খারিজ করে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ নয়। রাজ্যে আসছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করে কলকাতা হাইকোর্টের মূল উদ্দেশ্য, এদিন এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট।
শুনানির প্রথমেই কমিশনের আইনজীবীকে বিচারপতি নাগরত্নের প্রশ্ন ছিল, ‘আপনারা পাঁচ রাজ্য থেকে পুলিশ চেয়েছেন। আর হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে। খরচ কেন্দ্র দেবে। তাহলে কমিশনের অসুবিধা কোথায়? তা ছাড়া ভোটে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কেন্দ্রীয় বাহিনী হলে সমস্যা কোথায়?’
জবাবে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘রাজ্যের পুলিশ যথেষ্ট সমর্থ। পুলিশকর্মী কম থাকায় অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ চাওয়া হয়েছে। সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হলে পরিকল্পনা বদল করতে হবে। নির্বাচনের মুখে যা সমস্যার।’সঙ্গে কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘নির্বাচন ঘোষণার পরের দিনই মামলা করা হয়ে গেল। তখন মনোনয়ন পর্ব চলছে। মনোনয়ন পর্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন কেন্দ্রের ১ কিমি পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ সহযোগিতা করেছে। এর মধ্যেই হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছে। আমাদের স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিত হয়নি। আমাদের সেই কাজ চলছিল। তা ছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি রাজ্য দেখে। এখানে কমিশনকে সরাসরি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।’
কমিশনের আইজীবীর যুক্তি শোনার পর বিচারপতি নাগরত্ন বলেন, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা তো কমিশনের উপর নয়, তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আপনারা চিন্তিত কেন? আপনারা আপনাদের কাজ করুন। যেখান থেকেই বাহিনী আসুক, আপনাদের অসুবিধা কোথায়?’ প্রত্যুত্তরে কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আমরাও উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবি করি। কিন্তু এখানে হাইকোর্ট আমাদের উপর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইতে। সেটা আমরা কী ভাবে করব? এটা আমাদের কাজ নয়।’
পাল্টা বিচারপতি বি ভি নাগরত্ন বলেন, ‘এর মানে আপনারাও স্বীকার করে নিচ্ছেন যে রাজ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যায় পুলিশ বাহিনী নেই। তাই অন্য রাজ্য থেকে বাহিনী চাইতে হচ্ছে আপনাদের। তার চেয়েও তো ভাল এক জায়গা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা। এতে আপনাদের আপত্তি কোথায়?’ বিচারপতির সংযোজন ছিল, ‘ভোটে কোনও রকম অশান্তি হবে সেটা আশা করা যায় না। অতীতে রাজ্যে হিংসার ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। এই অবস্থায় হাই কোর্ট পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছে। সেখানে অসুবিধার কিছু দেখছি না।’
আদালতে বিজেপির তরফে আইনজীবী হরিশ সালভের বক্তব্য ছিল, ‘নির্বাচনের নির্ঘণ্ট দেখলে হাইকোর্টের নির্দেশ পরিষ্কার হবে। নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে ৮ জুন। হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ১৫ জুন। অর্থাৎ, তার আগে পর্যন্ত কমিশনের কোনও পরিকল্পনায় চোখে পড়েনি। তারা স্পর্শকাতর বুথ চিহ্নিতই করতে পারেনি। আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরোধিতা করে তারা বলছে সব পরিকল্পনা পূর্বের করা ছিল। কোথায় পরিকল্পনা? আসলে ওই রাজ্যের নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি রাজ্য প্রশানের তল্পিবাহক।’
এরপরই সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করানোর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো আর কতোদিন জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হবে ? জনগনের টাকা নিয়ে নয়ছয় করা হবে?
টাকা জলে যাওয়া বা আদালতে থাপ্পড় খাওয়ার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া মনোনয়ন হয়ে গেল, স্ক্রটিনি হয়ে গেল, প্রত্যাহার ও হয়ে গেল৷ আরো যতদিন পারা যায় টানবে, রিকুইজিশন দেবেনা, টালবাহানা করবে, এ ওকে চিঠি লিখবে, রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে-এই করে যত বেশী দিন রাজ্য পুলিশ দিয়ে কাজ সারা যায় তাই করবে ৷