‘নতুন লোক তো আসছেই। নতুন লোক মানে তো বুঝতেই পারছেন, সব বাংলাদেশের লোক আসছে। তাদের নাম বেশি তুলতে গেলে বেশি ক্ষতি। কারণ তারা তো হিন্দু হিন্দু করে বেশিটাই ভোট দিয়ে দেয় বিজেপিকে। আমরা দেখেছি, এটা নিয়ে অস্বীকার করার কিছু নেই’। TMC নেতা খোকন দাসের বক্তব্য।
বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসকে বলতে শোনা যায়, ‘ভোটার লিস্টে নাম তাদেরই তুলবেন যারা আমাদের পরিবার। যারা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন। যারা নতুন ভোটার তাদের তুলুন, কোনও কারণে বাদ গেছে তাদের তুলুন, ট্রান্সফার হবে তাদের তুলুন। বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের নাম ভোটার লিস্টে তোলা যাবে না।’
আর এখানেই প্রশ্ন, পূর্ব বঙ্গ থেকে আসা বাঙালদের নাম কী ভোটার লিস্ট থেকে কেটে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন এই তৃণমূল নেতা নাকি ১৯৭২ সালের পরে যারা এপার বাংলায় চলে এসেছেন বা এখনও আসছেন তাঁদের নাম ভোটার লিস্ট থেকে কেটে বাদ দেওয়ার বা নাম না তোলার দাবি জানিয়েছেন খোকন? যদিও কেউ কেউ বলছেন, খোকন এই দাবি করেছেন মতুয়া সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে যারা দীর্ঘদিন ধরেই রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, পাট্টা পেয়ে গেলেও আজও নাগরিকত্ব পাননি এদেশের। এরাই এখন বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক হয়ে গিয়েছেন। সেই মতুয়াদের নাম ভোটার লিস্ট থেকে কেটে বাদ দেওয়ার নিদানই দিয়েছেন খোকন।
গত মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের টাউন হলে বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ লেভেল এজেন্ট এবং ভোটার তালিকায় সংশোধন নিয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই আলোচনা সভাতেই খোকন বলেন, ‘ভোটার লিস্টে নাম তাঁদেরই তুলবেন যারা আমাদের পরিবার। যারা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন। যারা নতুন ভোটার তাঁদের তুলুন, কোনও কারণে বাদ গিয়েছে তাঁদের নাম তুলুন, ট্রান্সফার হবে যাদের নাম তাঁদের তুলুন। এক্সট্রা কোনও লোক থাকার দরকার নেই। নতুন লোক তো আসছেই। নতুন লোক মানে তো বুঝতেই পারছেন, সব বাংলাদেশের লোক আসছে। তাদের নাম বেশি তুলতে গেলে বেশি ক্ষতি। কারণ তাঁরা তো হিন্দু হিন্দু করে বেশিটাই ভোট দিয়ে দেয় বিজেপিকে। আমরা দেখেছি, এটা নিয়ে অস্বীকার করার কিছু নেই। ভোটার লিস্টে নাম যে তুলবেন, দেখবেন নতুন লোক এলেও তাঁরা আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন কি না৷ যাঁরা সেটা করবেন, তাঁদেরই নাম ভোটার তালিকায় তোলার চেষ্টা করবেন৷ কারণ, এখন সবাই আমাদের দলের সঙ্গে ভিড়ে গিয়েছেন ৷ দু’দিন পর আবার ২০১৯, ২০২১ সালের মতো না-হয়ে যায়। নিজেদের জায়গা নিজেদের ছেলেদের করতে হবে। আর আমরাও দলকে বলছি, যাঁরা ২০১৯, ২০২১ সালে বুক চিতিয়ে বিজেপি-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তাঁদেরই বিভিন্ন পদ দেওয়া হবে। অন্য কোনও লোককে আমরা কোনও পদ দেব না। যারা দলের দুঃসময়ে দলের পাশে ছিলেন, তাঁদেরই জায়গা দেব।’
খোকনের এই বক্তব্য নিয়েই এখন বড়সড় বিতর্ক বেঁধে দিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠেছে ঠিক কাদের লক্ষ্য করে খোকন এই কথা বলেছেন? বাঙালদের লক্ষ্য করে, মতুয়াদের লক্ষ্য করে নাকি বিজেপিকে ভোট দেওয়া হিন্দু ভোটারদের লক্ষ্য করে? লক্ষ্য যারাই হোক না কেন, ভোটার লিস্ট থেকে বিরোধী পক্ষের ভোটার বা সমর্থক সন্দেহে ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া তো রীতিমত অপরাধ ও গভীর চক্রান্ত। তাই ইতিমধ্যেই অনেকে দাবি তুলেছেন গ্রেফতার করতে হবে খোকনকে। যদিও পুলিশের কাছে এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে জোড়াফুল শিবিরও।